রংপুর সংবাদদাতা : পারিবারিক তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৌসুমি তার দেড় বছরের শিশু মোসাদ্দেককে নিয়ে দেড় বছর পূর্বে স্বামীর বাড়ি থেকে বিতারিত হয়ে দরিদ্র পিতার ঘরে আশ্রয় নেয়। ইতিমধ্যে অনেকগুলো দিন পেরিয়ে গেলেও অসুখ বিসুখে নিজের সন্তানকেও দেখতে আসেনি মোসাদ্দেকের বাবা রুহুল আমিন।
এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মতামতে বিবাহ বিচ্ছেদের দিন ধার্য্যহয় ২১ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে। বিবাহ বিচ্ছেদের দিনে কাজীসহ উভয় পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিও বেশ জোড়ালো ছিলো। এক পর্যায়ে দেনাপাওনা ও বিয়ের উপঢৌকন নিয়ে বাকবিতন্ডা একপর্যায়ে মারমুখি অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বিষয়টি রংপুর কোতোয়ালী থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমানের কানে পৌছিঁলে তিনি তৎক্ষনাত ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠিয়ে উভয়পক্ষের গুরুত্বপুর্ণ ব্যক্তিদের ও স্বামী-স্ত্রীকে শিশু মোসাদ্দেকসহ থানায় নিয়ে আসে। থানায় ওসি স্বামী-স্ত্রী উভয়কে বুঝানোর পরে তাদের পরিবারের লোকজনসহ সবাই সিদ্ধান্ত নেয় তারা আর বিবাহ বিচ্ছেদ করবেনা। পরে ২৭ জানুয়ারী ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে মৌসুমি ফিরে যায় স্বামীর সংসারে সেই সাথে মোসাদ্দেক ফিরে পায় বাবাসহ দাদা-দাদীর ভালোবাসা।
জানা যায়, গত ৫ বছর পূর্বে রংপুর জেলার কোতোয়ালি থানার প্রত্যন্ত এলাকা পালচিড়া সরদার পাড়ার তমিজ উদ্দিনের মেয়ে মৌসুমি আক্তার(২৪)এর সাথে মিঠাপুকুর থানার পদাগন্জ পশ্চিম পাড়ার বাবু মিয়ার পুত্র রুহুল আমীন(২৮) সাথে বিবাহ হয়।
তাদের সংসার জীবনে এক উত্তরসূরীর জন্ম নেয়। নাম রাখা হয় মোসাদ্দেক হোসেন । শিশুটি বয়স এখন ৩ বছর । কিন্তু দেড় বছর বয়সে স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংসারে নেমে আসে অশান্তি।
সামান্য বিষয়ে স্বামী স্ত্রী ঝগড়ার জেরে স্বামী রুহুল আমিন তার স্ত্রী মৌসুমি আক্তারকে ঘর হতে বের করে দেয়। মৌসুমি আক্তার তার শিশু সন্তান মোসাদ্দেককে সাথে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে যায়।
প্রায় দেড় বছর ধরে উভয় পরিবারে কোনো যোগাযোগ ও সুসর্ম্পক না থাকায় সর্ম্পকের চরম অবনতি ঘটে । অনেক সালিশ দরবারে কোন সুরাহা না হলে অবশেষে উভয় পক্ষের লোকজন, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ গত ইং ২১ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে সালিশ দরবারে দেনমোহর, খোরপোষ, মেয়েকে দেয়া টাকা ও অন্যান্য উপঢৌকন সামগ্রীসহ বুঝে নিয়ে ডিভোর্সের সিদ্ধান্ত হয়।
তখনও সমাজ শিশুর বাবা-মা, অবুঝ শিশুর ভবিষ্যত, মানুষিক বিকাশে বাবা মার স্নেহ ভালোবাসা, আদর এর প্রয়োজনীয়তার কথা ভুলে নিজেদের র্স্বাথ নিয়ে তখনও ব্যস্ত, উত্তেজিত, মারামারির উপক্রম । এসময় ওসি মোস্তাফিজার রহমানের নির্দেশে বিট পুলিশ অফিসার দ্রুত চলে যায় পালচিড়া মৌসুমি আক্তারের বাড়িতে । অফিসার ইনচার্জ এর নির্দেশে রুহুল আমীন, মৌসুমি আক্তার ও উভয় পক্ষের লোকজনদের থানায় ডেকে নিয়ে আসা হয়।
অফিসার ইনচার্জ কোতোয়ালি থানা, রংপুর মোস্তাফিজার রহমান স্বামী স্ত্রী উভয়ের কথা শুনে সংসার করণের উদ্বুদ্ধকরনে এবং উভয়কে পরস্পরের মধ্যে আলাদা ভাবে আলোচনা করে বুঝাপড়া করার সময় দেন। অল্প সময়ের মধ্যে দু’জনে ফিরে এসে তারা আবারও সুন্দর সুখের সংসার শুরু করবে মর্মে সিদ্বান্ত জানায়।
সে মোতাবেক ২৭ জানুয়ারী ২০২১ তারিখে ৪ নং সদ্যপুষ্কন্নি বিট পুলিশ অফিসে বিট অফিসার চেয়ারম্যান, মেম্বর ও উভয় পক্ষের লোকজন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ লোকজন আনুষ্ঠানিকভাবে রুহুল আমীন ও মৌসুমির দির্ঘদিনের দাম্পত্য জীবনের কলহ-বিবাদের ইতি টানে। শিশু মোসাদ্দেক ফিরিয়ে পেল বাবা-মার ভালবাসা, স্নেহ আদর এবং প্রতিষ্ঠা করলো বাবা মায়ের একত্রে থাকার অধিকার।
বিট পুলিশের এমন মহতী কাজে ও সেবায় মুগ্ধ এলাকার সাধারণ মানুষ। সমাজে অসহায় দরিদ্র, নিপীড়িত, নারী শিশু ও বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পুলিশী সেবায় রংপুর জেলার পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম (বার) পিপিএম কে ধন্যবাদ জানান।
এব্যাপারে ওসি মোস্তাফিজার রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, শিশু সন্তানটির অধিকার আদায়ের লক্ষ্যেই আমি উভয় পরিবারের অভিভাবক ও স্বামী-স্ত্রীকে বুঝানোর চেষ্টা করি। এছাড়া আধুনিক পুলিশিং সেবা সাধারন মানুষের দোড়গোরায় পৌছেঁ দেয়ার আইজিপি ভিশন “বিট পুলিশিং” নিয়ে দিনরাত করে যাচ্ছেন রংপুর জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বিপিএম( বার) পিপিএম মহোদয়। তার সুনিপুণ দিক নির্দেশনায় রংপুর জেলায় কর্মরত বাংলাদেশ পুলিশ পাড়া মহল্লা গ্রামের মানুষের মাঝে শান্তি শৃঙ্খলা উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। যাতে সাধারন মানুষ দ্রুত বিট পুলিশিং সেবা বা সুফল পায়। একটি শিশুর ভবিষ্যত চিন্তা করে দুটি পরিবারের মাঝে ভুলবুঝাবুঝির অবসান ঘটানো ও সংসারে শান্তির চেষ্টা করাও বিট পুলিশিং এর কাজ বা দায়িত্ব বলে মনে করি।
উল্লেখ্য, ওসি মোস্তাফিজার রহমান গাইবান্ধার সাঘাটা থানা অফিসার ইনচার্জ দায়িত্বে থাকাকালীন সময়েও পারিবারিক দ্বন্ধের জের ধরে বিচ্ছেদ উপক্রম সংসার গড়ানোসহ অনেক মানবিক ও সেবামূলক কাজ করেছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসি মানুষের পাশে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যাওয়া, দরিদ্রদের মাঝে কুরবানির মাংস বিতরন ও বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে স্কুল মাদ্রাসায় আলোচনা সভা করা। অসহায় মানুষের চিকিৎসা সেবাসহ নানান সামাজিক কর্মকান্ডে সবসময় পাশে থাকতেন।