আবু তাহের ঃ
গাইবান্ধা জেলার ৬টি উপজেলা ও কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর, চিলমারি ,উলিপুর, রাজারহাট উপজেলায় কথিত কাপাডোত্র অর্থায়নে মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্পে বিভিন্ন ২১টি পদে চাকুরি দেয়ার প্রলোভন দিয়ে ওই জেলা উপজেলা গুলোর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামের কমপক্ষে ৫ হাজার বেকার যুবকদের থেকে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গাঢাকা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে কথিত বাদিয়াখালী ত্রাণ ও পূর্ণবাসন সংস্থার নির্বাহী পরিচালকসহ একটি প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে।
চক্রটি চাকুরির প্রার্থীদেরকে বিভিন্ন পদে নিয়োগপত্র দিয়ে এসব টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রতারণার শিকার বেকার যুবকরা নিজেদের দেয়া জামানতের টাকা ও বেতনভাতার টাকা উদ্ধারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল না পাওয়ায় অবশেষে সাঘাটার কয়েকজন ভুক্তভোগি জামানতের টাকা উদ্ধারসহ প্রতারকদের শাস্তির দাবি করে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত আবেদন করেছে।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন গ্রামের গরীব অসহায় পরিবারের সদস্য প্রতারণার শিকার এসব যুবক-যুবতী। প্রতারণার শিকার ঘুড়িদহ গ্রামের দিনমজুর হায়দার আলীর ছেলে আরিফুল ইসলাম জানান,সাঘাটা উপজেলা হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ইপিআই) পদে চাকুরী করতেন আব্দুর রাজ্জাক। তিনি আমাকে নিয়োগপত্র দেখিয়ে বলেন, বাদিয়াখালী ত্রাণও পূর্ণবাস সংস্থার কমিটিতে আমি ও আমার স্ত্রী স্বপনা বেগম আছি। এই সংস্থার অধিনে মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রকল্পে চাকুরী পাওয়ার সুযোগ আছে। তোমরা জামানতের টাকা দিলে চাকুরী দিবো। তার কথামতো আরিফুল ইসলাম আব্দুর রাজ্জাককে ১ লাখ টাকা জামানত বাবদ দেয়। রাজ্জাক সে সময় অর্থাৎ ১১/০৪/২০১৯ ইং তারিখে বাদিয়াখালী ত্রাণ ও পূর্ণবাস সংস্থা কার্যালয়ে নিয়ে গেলে পরিচালক ওমর ফারুক তাকে জুমারবাড়ী ইউনিয়ন সুপার ভাইজার পদে নিয়োগপত্র দেন।
এমনিভাবে হাসিলকান্দি গ্রামের আবু হোসেন জানান আমি আমার ছেলে মোশারফ হোসেন, ভাতিজি শোভা খাতুন ও আসাদুর রহমানসহ ৩ জনের চাকুরির জন্য দুইবছর পুর্বে ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রাজ্জাককে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দিলে তাদেরকেও নিয়োগপত্র দেন। একই ভাবে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে উপজেলার ঝাড়াবর্ষা গ্রামের হাসান মিয়ার ছেলে বকুল মিয়াকে ঘুড়িদহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কর্মী পদে, ৫০ হাজার টাকা দিয়ে হাটবাড়ি গ্রামের মৃত আব্দুল কদ্দুছ মোল্লার মেয়ে নাছরিন আক্তার সাঘাটা ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মী পদে, ১ লাখ টাকায় নাছরিনের ছোট বোন সিনিগ্ধা আক্তারকে সাঘাটা ইউনিয়ন সুপার ভাইজার পদে ৫০ হাজার টাকায় সাঘাটা গ্রামের আব্দুল মজিদ মন্ডলের স্ত্রী ফাতিমা বেগমকে সাঘাটা ইউনিয়ন মাঠ পদে নিয়োগপত্র প্রদান করা হয়।
শুধু তাই নয় ঝাড়াবর্ষা গ্রামের ভ্যান চালক হরিবর রহমান তার ভ্যানে গাইবান্ধা সদর থেকে সাঘাটা হাসপাতালের ঔষধ নিয়ে আসার সুবাদে ইপিআই আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তার পরিচয় ঘটে পরে সংস্থার পরিচালক ওমর ফারুকের সাথে তিনি যোগাযোগ করে দেন। সেই সুযোগে ওমর ফারুক তাকে প্রতিজন লোকের জন্য ১০ হাজার করে টাকা বকশীস দেয়ার প্রলোভন দিলে সে ২৫ জনের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুককে দেয়। পরবর্তীতে মেডিকেল টেকনোলজি (ইপিআই) আব্দুর রাজ্জাক সুকৌশলে সাঘাটা হাসপাতাল হতে পাবনা আটঘড়িয়া উপজেলা হাসপাতালে বদলী নিয় সেখানে কর্মরত আছেন।
শূধু রাজ্জাকই নন তার সাথে এলাকার বেশ কয়েকজন দালাল ও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ওমর ফারুক, সহকারী পরিচালক উপ-পরিচালক যোগসাজসে একটি প্রতারক চক্র ৫ হাজারের অধিক যুবক-যুবতীর কাছ থেকে কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সূত্রে জানা যায়, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক ২১টি বিভিন্ন পদ অনুযায়ী নিয়োগ প্রাপ্তদেরকে সর্বোচ্চ ৫৬ হাজার থেকে ৮ হাজার ৫ শত টাকা পর্যন্ত বেতন দেয়ার কথা। কিন্তু বেতন-ভাতা পাওয়াতো দুরের কথা নিয়োগ জামানতের টাকা নিয়ে নিয়োগপত্র দেয়ার পর থেকে সংস্থার সংশ্লিষ্ট সকলেই গাঢাকা দিয়েছে।
৩১ জানুয়ারী ২০১৯ খ্রিঃ দৈনিক গাইবান্ধার মুখ পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে,গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত বিটিপিএস রিফাইতপুর বাদিয়াখালী গাইবান্ধা একটি সেবামুলক সংস্থা।যহিার নিবন্ধন নং সমাজসেবা ১২৪৬/০৮ ও এনজিও ব্যুরো২৭৬৮/১৩ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে ঈড়ঁহঃবৎঢ়ধৎঃ ওহঃবৎহধঃরড়হ ফড়হড়ৎ ধমবহব (টঝঅ) এর অর্থায়নে পরিচালিত মা ও শিশু স্বাস্থ্য পরিচর্যা গাইবান্ধা জেলার গাইবান্ধা সদর ,সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ,সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা এবং কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর,চিলমারি ,উলিপুর, রাজারহাট উপজেলাসমুহের সকল উপজেলাও ইউনিয়ন পর্যায়ে এবং প্রধান কার্যালয়ে কিছু সংখ্যক পুরুষ/মহিলা নিয়োগ করা হবে।
এব্যাপারে ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রাজ্জাকের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, অভিযোগকারিদের কাছে থেকে চাকুরি দেয়ার নামে জামানতের নামে টাকা নেয়া ঘটনা সত্য। আমি বাদিয়াখালী ত্রাণ ও পুর্ণবাসন সংস্থার নির্বাহী প্রধান ওমর ফারুকের কথা সরল বিশ্বাসে শুনে আমার এলাকার বেকার যুবকদের চাকুরি দেয়ার নামে টাকা তুলে কমপক্ষে ২২ লাখ তাকে দেই। টাকা নেয়ার পর যুবকদের সে নিয়োগপত্র দেন। একই সাথে তাদের ব্যাগ দেয়া হয়। সেই সাথে তাদের কর্ম এলাকাও নির্ধারন করে হাজিরা খাতাসহ দায়িত্ব দেয়। ওই সব চাকুরি পাওয়া যুবকরা কাজ শুরু করে কয়েক মাস অতিবাহিত হলে বেতনভাতা না পেলে তারা আমাকে চাপ দেয়। আমি ওমর ফারুককে কর্মীদের বেতনভাতা দেয়ার চাপ দিলে তিনি তালবাহানা শুরু করেন। একদিকে বেকার যুবকদের বেতনভাতা ও জামানতের টাকার চাপ অন্যদিকে সংস্থার নির্বাহী প্রধানের তালবাহানা আমাকে অতিষ্ট করে তোলে। বাধ্য হয়েই আমি বদলী হয়ে অন্যত্র চলে আসি।
এব্যাপারে সংস্থার নির্বাহী প্রধান ওমর ফারুকের সাথে ফোনে কথা হলে তিনি জানান, সাঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও ইপিআই টেকনিশিয়ান আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী ও স্বাস্থ্য সহকারি সাইদুরের স্ত্রী আমার সংস্থার কমিটির সদস্য। সেই সুবাদে তারা আমার থেকে কিছু নিয়োগপত্র স্বাক্ষর করে নিয়ে যায়। যার প্রমাণ আমার কাছে আছে। তারা নিয়োগপত্র নিয়ে অনেকের নিকট থেকে জামানত বাবদ টাকা নিয়েছে বলে শুনেছি। এর দায় আমি কেন নিবো।
চলবে,,,,,,